সৌজন্যে - প্রথম অালো ....
সে ভালোবাসে আমার এক বান্ধবীকে
১৯ আগস্ট ২০১৭, ০০:১০
সমস্যা
আমি স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। হঠাৎ যখন আমার বাড়ি থেকে বিয়ে দিতে চাইল, তখন আমি তাকে জানালাম। আমি তাকে বললাম, ‘আমরা লুকিয়ে বিয়ে করতে পারি।’ সে রাজি হলো না। কারণ হিসেবে জানাল, সে তখন একজন ছাত্র। অথচ এর সপ্তাহখানেক আগেও বলেছে, সে আমার জন্য মরতে রাজি।
এখন জানতে পারছি, সে আর আমাকে ভালোবাসে না। সে ভালোবাসে আমার এক বান্ধবীকে। যার সঙ্গে আমিই পরিচয় করিয়েছিলাম। এটা আমার জন্য কতটা লজ্জার, তা বোঝাতে পারব না। আমার বান্ধবী আমাকে হুমকি দিয়েছে, ওর পথ থেকে সরে যেতে।
আমি এখনো তাকে ভালোবাসি। বাবা-মা চান, আমি যেন বিয়ে করি। কিন্তু আমি তাকে ভুলতে পারছি না। খুব মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
দীর্ঘদিন ধরে তুমি খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলে, কিন্তু হঠাৎ করে ছেলেটির নেতিবাচক আচরণে মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত বোধ করছ। তবে তুমি স্নাতক সম্পন্ন করার আগেই পরিবার থেকে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কেন ব্যস্ত হলো, তা বুঝতে পারিনি। এমন কি হতে পারে যে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরেছিলেন যে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক চলছে। এতে তাঁদের মতামত ছিল না বলে তাঁরা অন্য কোথাও তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তুতি নিতে চেয়েছেন?
আমি বুঝতে পারছি খুব অসহায় বোধ করেই তুমি ওকে লুকিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলে। তবে ছাত্রাবস্থায় ছেলেটি তো বিয়ে করার জন্য তৈরিও ছিল না। তা ছাড়া কারও মতামত না নিয়ে নিজেরা বিয়ে করার ফলে পরবর্তী সময়ে অনেক সমস্যা হতে পারে। দেখা যায়, ছেলেটিকে তাড়াহুড়ো করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে জীবনের একটি বড় যুদ্ধে পড়ে যেতে হয়। এই পরিশ্রম করতে গিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে, পরে মেয়েটিকে প্রায়ই দোষারোপ করতে থাকে এবং দুজনের সম্পর্কে তখন টানাপোড়েন তৈরি হয়।
তোমার যেহেতু পড়াশোনা শেষ হয়নি, তুমি যদি দৃঢ়ভাবে বাবা-মাকে বলতে পারতে যে, কোনোভাবেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের আগে তুমি বিয়ে করবে না, তাহলে ভালো হতো। খালাতো ভাইয়ের আচরণটি সত্যিই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে অন্য একটি মেয়ের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে আগেই তোমাকে সেটি জানানো তার দায়িত্ব ছিল। এতে তার নৈতিকতা, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধের অভাব খুবই স্পষ্ট। একটি সম্পর্ককে যদি আমরা শেষ করতে চাই, তাহলে নিজের অপারগতা প্রকাশ করে অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
এত দিনের সম্পর্ককে হঠাৎ শেষ করে দেওয়ার ব্যাপারটিও তোমার জন্য একটি বিরাট ধাক্কা হয়েছে। একজন মানুষের প্রত্যাখ্যান কিন্তু প্রমাণ করে না যে, তুমি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য নও। তবে তোমরা লুকিয়ে বিয়ে করার পর সে যদি এ ধরনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটাত, তাহলে তোমার জন্য সেটি আরও অনেক বেশি কষ্টের ব্যাপার হতো, তাই না? আশা করি, সৃষ্টিকর্তা তোমাকে সহায়তা করবেন, মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে আবার আগের মতো করে পথ চলতে। তুমিও নিজের ওপরে ভরসা রেখে, নিজেকে শ্রদ্ধা করে সুষ্ঠুভাবে পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হও। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত ও সচেতন মেয়ে থাকা প্রয়োজন, যারা নিজের পরিবার ও গোটা সমাজকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তুমিও তাদের একজন হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও।